সমান্তরাল

সেলিম মোহাম্মেদ

পানির নাকি নিজস্ব কোন রঙ নেই কথাটি বহুল প্রচলিত। আচ্ছা- পানির যদি কোন রঙ না-ই থাকে তাহলে লাল সমুদ্র (Red sea) কালো সমুদ্র (Black sea) নীল পানি (Blue water) এসব নামে নামকরণ করা হয় কেনো? আর আমাদের পদ্মা মেঘনার মিলন স্থলে গেলেও কিন্তু পরিস্কার বুঝা যায় দুই নদীর দুই রঙের পানি! তারমানে পানির নিজস্ব একটি রঙ ঠিকই আছে, তবে সেটা খুবই হালকা, আর সে কারণেই পানিকে যে পাত্রে রাখা হয় পানি সেই পাত্রের আকারটাই ধারন করে নেয়, আর সে কারণেই আমরা বলি পানির নিজস্ব কোন রঙ নেই।


আমাদের দেশে আরো একটি জিনিস আছে এই পানির মতো, তাঁদেরও নিজস্ব কোন রঙ নেই, তাঁরা হলো পুলিশ। কারণ এই পুলিশেরও নিজস্ব কোন রঙ বা চরিত্র বলতে কিছু নেই। যদিও অনেকে বলে থাকে সব পুলিশ একরকম নয়, আমার মনে হয় এই কথাটি যারা বলে তাঁরা তাঁদের জীবন কিংবা পিঠ বাঁচানোর জন্যই বলে। কথায় আছে “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দু’জনেই সম অপরাধী” তাই ভালো পুলিশ যখন খারাপের প্রতিবাদ না করে তখন তাঁকে ভালো বলি কী করে?


⭐ না শুভ, পুলিশ নিয়ে তোমার এই মন্তব্যটা পুরোপুরি ঠিক না, ভালো মন্দ নিয়েই যেহেতু পৃথিবী, তাই শুধু পুলিশ নয় সব জায়গাতেই তুমি ভালো মন্দ পাবে।
⭐ তুমি একেবারে ভুল বলোনি প্রভা! তবে পুলিশকে তো যে যখন ক্ষমতায় এসেছে সে তখন টয়লেট টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছে,আর পুলিশ নিজেও তাঁকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে, তাই পুলিশের কথাটাই বলছি। আজকাল অবশ্য বিচারপতিরা আর নির্বাচন কমিশন আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে পুলিশের দখলকৃত জায়গাটি দখলে নেয়ার জন্য, অদুর ভবিষ্যতে হয়তোবা দখলে নিয়েও নেবে।
⭐ আচ্ছা পুলিশের উপর এতোটা বিরক্ত হলে কেনো, তুমি তো দেশেই থাকো না?
⭐ দেশে থাকি না বলেই তো ওদের কর্ম কান্ড হজম করতে পারছিনা! জীবনে পৃথিবীর বহু দেশের পুলিশ দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশের মতো এতো মন্দ পুলিশ আমি কোথাও দেখিনি। পৃথিবীর সকল দেশের মানুষ মনে করে পুলিশ তাঁদের বন্ধু, কিন্তু আমার মনে হয় একমাত্র বাংলাদেশেই পুলিশ জনগণের বন্ধু না হয়ে হয়েছে চরম শত্রু।


⭐ এই যে বললে পুলিশ জনগণের বন্ধু এটা শুধু-ই কথার কথা, না হয় পুলিশ দেখলে কে না ভয় পায়?
⭐ না প্রভা কথাটা ঠিক নয়, ইউরোপ আমেরিকা এবং উন্নত দেশগুলোতে শুধু চোর সন্ত্রাসীরাই পুলিশকে ভয় পায়, আর সাধারণ নাগরিকরা পুলিশকে বন্ধু বলেই মনে করে। অবশ্য বাংলাদেশের পুলিশ দেখলে মানুষের ভয় পাওয়ার একটা বিশেষ কারণ আছে।


⭐ কী কারণ?
⭐ একটা গল্প শুনো তাহলে-
একবার এক সাহেবের একটা ছাগল হারিয়ে গিয়েছে, তখন তিন দেশের তিনটি পুলিশ গ্রুপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ছাগলটি খুঁজে বের করার। তো প্রথম আমেরিকান পুলিশ গিয়ে এলাকায় কয়েক ঘন্টা খুঁজে ছাগল না পেয়ে ফিরে এসেছে। তারপর খুঁজতে গেলো বৃটিশ পুলিশ গ্রুপটি, তাঁরাও না পেয়ে ফিরে এলো, তারপর গেলো বাংলাদেশের পুলিশ, দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাঁরা ফিরে আসছে না। অবশেষে আমেরিকান আর বৃটিশ পুলিশরা গেলো তাঁদেরকে খুঁজতে, গিয়ে দেখে- জঙ্গলে একটি কুকুরকে বেঁধে বেদম পিটাচ্ছে আর বলছে, স্বীকার কর- তুই সাহেবের হারিয়ে যাওয়া ছাগল। এবার বুঝতে পারলে মানুষ কেনো ভয় পায়?


⭐ তুমি কোথায় যে পাও এসব গল্প! আচ্ছা এবার বলো তো- বিচারক আর নির্বাচন কমিশনের সমস্যাটা দেখলে কী?
⭐ বন্ধু সমস্যা তো অনেক, কোনটা রেখে কোনটা বলি? তবে একটু বলি, পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে নিয়ে যায় বিচারকের কাছে, তখন মদন মার্কা কিছু বিচারক আছে, দুঃখিত মদন নয়, এই বিচারক আবার স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় ছিলো ইংল্যান্ডে কিন্তু নিজেকে দাবী করে মুক্তিযোদ্ধা, ইংল্যান্ডে কিছুই করতে পারেনি কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে বিশাল বড়ো এক বিচারপতি, এ যেনো “যার ছিলোনা কোন গতি হয়ে গেছে বিচারপতি” সে এবং তার মতো কয়েকজন কান্ড জ্ঞানহীন মিলে কর্তার ইচ্ছেমতো বলে হ্যা এটাই আসল অপরাধী, অতোএব খেলা শেষ।


⭐ বুঝলাম পুলিশ আর বিচারকরা মিলে নিরপরাধীকে অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এখানে নির্বাচন কমিশন এলো কী করে?
⭐ আরে বন্ধু পুলিশ আর বিচারবিভাগ যার ইশারায় এসব অপরাধ করছে, সেই কর্তাদেরকে ক্ষমতায় বসার বৈধতা দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। তবে এবার আর কেউ রেহাই পাবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছে কিন্তু পুরো বিশ্বকে আর বোকা বানানোর সুযোগ পাবে না। এবার সবার বিচার ঠিক মতোই হবে। আগামীকাল অর্থাৎ ১৫ই নভেম্বর থেকে খেলা শুরু হলো ধরে নিতে পারো। এতো দিন বিনা অপরাধে যাদের অপরাধী বানিয়েছো, এবার তাঁরাই খেলাটা খেলবে।


⭐ সেটা কিভাবে একটু পরিস্কার করে বলো না?
⭐ আচ্ছা তোমাকে আরো একটা গল্প বলেই শেষ করবো, এই গল্পেই পাবে তোমার উত্তর।
পুলিশ/বিচারক/আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিলে একজন বিরোধী দলের এমপিকে নিয়ে যাচ্ছিলো বিশেষ একজনের কাছে, যাওয়ার পথে একদল জঙ্গলীমানুষ তাঁদেরকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে জঙ্গলে। তাঁদের সর্দার বললো, আমার হাতের এই লোহার ডান্ডা দিয়ে আমি তোমাদের পিঠে দশটি করে ডান্ডা মারবো, যে বেঁচে যাবে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর যে মরে যাবে তাঁকে আমরা পুড়িয়ে খাবো, তবে তোমরা চাইলে তোমাদের পিঠে যা ইচ্ছে বেঁধে নিতে পারবে।
প্রথমে পুলিশ তাঁর পিঠে বালিশ বেঁধে নিলো, কিন্তু দশ ডান্ডা খেয়ে অর্ধ মৃত প্রায়।


বিচারক এবং নির্বাচন কমিশনের ও একই অবস্থা।
এবার বিরোধী দলের এমপি বললো, হুজুর আমাকে দশটা নয় বিশটা ডান্ডা মারবেন। (সবাই ভাবতে লাগলো বেটা আহাম্মক এই কারণেই তো বিরোধী দলের এমপি হয়েছো) তবে হুজুর ডান্ডা মারার আগে এই তিন বদমাইশকে আমার পিঠে বেঁধে নিবেন। পর্ব-৮, চলবে। সেলিম মোহাম্মেদ, লন্ডন ইউ কে।