সেলিম মোহাম্মেদ
কে কে স্বর্গে যেতে চান?
প্রশ্ন শুনে হাত উঁচু করে জানান দিলেন সবাই যেতে চান।
প্রশ্নকারী ব্যক্তি এবার বললেন, স্বর্গে যাওয়ার পূর্বশর্ত হলো মৃত্যু, কারণ মরার আগে তো স্বর্গে যাওয়া যাবে না! তাই এবার বলেন- মরার জন্য কে কে প্রস্তুত আছেন? তখন আর কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
উপরের এই কথাগুলো আমার নয়, একদিন এক আড্ডায় এই কথাগুলো বলেছেন ডঃ নেয়ামত উল্ল্যা ভুঁইয়া সাহেব, আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ এবং বেশ উঁচু মানের একজন কবি। আসলে এই পৃথিবীতে আমরা কেউ মরতে চাই না, তাই বলে কেউ কি চিরদিন বেঁচে থাকতে পেরেছে? না- পারেনি, যারা-ই চেষ্টা করেছে বেঁচে থাকতে, তাঁরা সবাই নিরবে নিভৃতে চলে গেছে এই পৃথিবী থেকে।
তবে কিছু মানুষ আছে ব্যতিক্রম, যাদের মৃত্যুই তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে শত সহস্র বছর, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জীবন দেয়া ক্ষুদিরাম তাদেরই একজন। অতো দূরে না গিয়ে নব্বই থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত কতো মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, ক’জনকে আমরা মনে করি? কিন্তু “নূর হোসেন” মরেও বেঁচে আছে আমাদের মাঝে, তাই আমার মতে একমাত্র মৃত্যুই পারে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমার এসব কথা শুনে প্রভা জানতে চাইলো-
⭐ আচ্ছা তুমি নিজেও কি মরতে চাও?
⭐ বললাম না- আমি নিজেও মরতে চাইনা, তবে আমি জানি আমার এই বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাই আমাকে মেরে ফেলবে, কেউ আমাকে মনেও রাখবে না। এবার বলো তুমি কি চাও?
⭐ মিথ্যা বলবো না শুভ- মরতে আমিও চাইনা, আমি চাই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে আমার কর্ম দিয়ে,আর এই জন্যই রাজনীতিতে জড়িয়েছি!
⭐ বন্ধু তোমার ইচ্ছেটা তো খুবই ভালো, কিন্তু তোমরা কি সেই রাজনীতি করো যে রাজনীতি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে এদেশের মানুষের মাঝে?
⭐ অবশ্যই করি, আমরা-ই এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। এতো কিছুর পরও যদি এদেশের মানুষ আমাদের কথা মনে না রাখে, তাহলে এদেরকে মানুষ না বলে অমানুষ বলাটাই হবে শ্রেয়।
⭐ প্রভা এখানেই তোমাদের রাজনীতি আর সত্যিকারের রাজনীতির পার্থক্য!
⭐ আমাদের রাজনীতি আর সত্যিকারের রাজনীতি বলতে কি বুঝাতে চাও শুভ?
⭐ তাহলে শুনো বন্ধু, আজ থেকে শত বছর আগে এই বাংলায় প্রখ্যাত কিছু রাজনীতিবিদ ছিলেন যাদেরকে আজও আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকি, যেমন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, স্যার সলিমুল্লাহ, বগুরার দুই ভাই মোহাম্মদ আলী আর লিয়াকত আলী, স্যার নওয়াব আলী সহ আরো অনেকে, তাঁরা আমাদেরকে পদ্মা সেতু কিংবা মেট্রো রেল দিয়ে যেতে পারেনি কিন্তু তাঁদের বিশুদ্ধ রাজনীতির মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে এবং ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখে গেছে তাঁদের নাম, যা আজও অমলিন।
⭐ তাহলে কি তুমি বলতে চাচ্ছো আমরা এখন তাদের মতো বিশুদ্ধ রাজনীতি করছিনা?
⭐ ঠিক বলেছো, তাঁদের রাজনীতি ছিল জাতীয় স্বার্থে মানবতার জন্য, তাঁদের রাজনীতি ছিলো গলাগলির, ছিলো বিরোধী মতের মানুষের প্রতিও সন্মান শ্রদ্ধা। আর তোমাদের রাজনীতি হলো দলের স্বার্থে,ব্যক্তির স্বার্থে, গালাগালি আর গোলাগুলির রাজনীতি। তা না হলে কি আর বলতে পারতে, যারা তোমাদের মনে না রাখবে তাঁরা মানুষ নয় অমানুষ? বিরোধী মতের মানুষকে তোমার নেত্রী বলে জানোয়ার,এসব ভাষা যারা ব্যবহার করে, তাঁদেরকে বিশুদ্ধ রাজনীতিবিদ কিংবা সভ্য মানুষ বলা যায় না।
⭐ তুমি যা-ই বলো না কেনো, পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এবং বিশ্বের নন্দিত পত্র পত্রিকায় আমাদের দেশ এবং নেত্রীর ব্যপারে অনেক ভালো ভালো কথা বলছে, তুমি নিশ্চয়ই দেখেছো গত সপ্তাহে টাইম পত্রিকার প্রতিবেদনে কি লিখেছে?
⭐ হ্যা আমি পড়েছি, টাইম পত্রিকা কিন্তু মাঝে মাঝে যমদূতের মতো কাজ করে বন্ধু! এই পত্রিকায় যখন-ই কাউকে নিয়ে বিশেষ কোনো প্রতিবেদন লেখা হয়েছে, ঠিক তার পরপরই সে মানুষের ঠিকানায় আজরাইল এসে হানা দিয়েছে। যেমন ইন্দিরা গান্ধী, বেনজীর ভুট্টো, সাদ্দাম হোসেন, কর্নেল গাদ্দাফি, বিন লাদেন, এখন আবার তোমাদের নেত্রী????, আমি কিন্তু বেশ ভয়ে আছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তোমাদের নেত্রীর ব্যপারে যা লিখা হয়েছে তার নব্বই ভাগ ছিলো অসম্মান জনক লেখা আর দশ ভাগ ছিলো ভালো, কিন্তু খুব আশ্চর্য হয়েছি তোমাদের মাতামাতি দেখে! এসব ইংরেজি ভাষা না বুঝার কারণে- নাকি অন্য কিছু সেটাই বুঝতে পারছি না!
⭐ শুভ, আসলে তোমরা শুধু আমাদের দোষটাই খুঁজে বেড়াও মাঝেমধ্যে গুন গুলোও একটু মানুষকে বলো!
⭐ না বন্ধু ভুল বললে, আমি শুধু তোমাদেরকে জাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি, কারণ তোমরা একটা স্বপ্নের ঘোরে আছো এবং ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো। এখন তোমরা যেভাবে বিরোধী মতের সকলকে জেলে আটক করে একটা প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো এটা করে তোমরা বাঁচতে পারবে না, উল্টো তোমরা নিজেদের ধ্বংসকে তরান্বিত করেছো। লিখে রাখতে পারো তোমাদের শেষ রক্ষা হবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দেখবে হাওয়া উল্টো দিকে বইতে শুরু করেছে। তোমার নেত্রী নিজের ভয় দূর করার জন্য পুরো জাতিকে ভয় দেখাচ্ছে।
⭐ তুমি ও দেখে নিও আমরা আবারও ক্ষমতায় আসছি,এই পর্যন্ত অনেকেই অনেক কিছু বলেছে, আমাদের নেত্রীকে কেউ আটকাতে পারেনি আগামীতেও পারবেনা।
⭐ ভুল বললে প্রভা, ২০০৮ এর নির্বাচনে কিভাবে ক্ষমতায় এসেছো সেটা প্রনব মুখার্জি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তাঁর লেখা বইয়ে। ২০১৪ তে সুজাতা সিং উড়ে এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে, ২০১৮ তে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় বসেছো, এবার আর এসব হবে না। কারণ তখন এসব অপরাধে যারা তোমাদের সহযোগিতা করেছিল এবার তাঁরাই চাচ্ছে না, তাই ক্ষমতায় যেতে হলে সঠিক পথে যেতে হবে তা না হলে টাইম পত্রিকার যমদূতের সম্মুখীন হতে হবে। অন্য কোন পথ তোমরা খোলা রাখোনি।
⭐ টাইম পত্রিকার লেখা তুমি নেগেটিভ ভাবে দেখলেও সেখানে কিন্তু পজেটিভ কিছু কথাও আছে বন্ধু!
⭐ আচ্ছা কেমন পজেটিভ আছে তার উপর একটা গল্প বলেই আজকে শেষ করবো।
এক অশিক্ষিত লোক প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে, তাই টাকার গরমে কি গরম আর কি ঠান্ডা সবসময় স্যুট পড়েই ঘুরে বেড়ায়। একদিন টাকার গরমে প্লেনের ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণ করছিলেন সেখানে সবাই ছিল বেশ শিক্ষিত, যেহেতু আন্তর্জাতিক ভ্রমন তাই সেখানে শুধু ইংরেজী পত্রিকা ছিলো। সবাই পত্রিকা পড়ছিল তাই সে নিজেও একটা পত্রিকা নিয়ে বসে বসে পড়ার ভাব করছে, যেহেতু সে পড়তেই জানে না, তাই পত্রিকা উল্টো করে ধরে বসে আছে।
সেই পত্রিকায় ছিলো কয়েকটি বাসের ছবি, উল্টো করে পত্রিকা ধরার কারণে ছবি গুলো উল্টো দেখা যাচ্ছে! ওখানে অন্যরা পত্রিকার খবর নিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে দেখে সেই অশিক্ষিত টাকা ওয়ালারও কিছু একটা বলার ইচ্ছে হলো, কিন্তু কি বলবে? হঠাৎ ঐ বাসের উল্টো ছবি দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, আহ্হারে কি একটা এক্সিডেন্টই না হয়েছে, বাসগুলো সব উল্টে গেছে, নিশ্চয়ই একজন মানুষও বাঁচতে পারেননি! পর্ব – ৭, চলবে। আগামী সংখ্যায় চোখ রাখুন। সেলিম মোহাম্মেদ, লন্ডন ইউ কে।