সেলিম মোহাম্মেদ
শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে বললো, আমরা সবাই বলি ” অতি চালাকের গলায় দড়ি ” এই অতি চালাকের একটা উদাহরণ দিতে পারবে? হঠাৎ এক ছাত্র বললো স্যার আমি পারবো। আচ্ছা বলোতো দেখি কে এই অতি চালাক?
স্যার গরু হলো অতি চালাক।
ধুর বোকা, গরু আবার অতি চালাক হয় কি করে?
স্যার গরু অতি চালাক বলেই তো তার গলায় দড়ি থাকে!
এই ছাত্র শিক্ষকের কথাগুলো শুনে আমি ভাবছি,ঐ ছাত্রের উদাহরণটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়! কারণ আমার মতে অতি চালাক আর গরুর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তাই বুদ্ধিমান আর চালকের মাঝে পার্থক্যটা বুঝা খুবই জরুরি। বুদ্ধিমান মানুষের মাধ্যমে পৃথিবীতে অনেক ভালো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চালাক মানুষের দ্বারা পৃথিবীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। চালাকি করে সাময়িক ভাবে সফলতা অর্জন করা যায় কিন্তু সে সফলতা বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য কিংবা কথা শুনলে মনে হয়, তাঁরা বুদ্ধির চেয়ে চালাকিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
এই চালাকি করে ক্ষমতায় আছে বলেই তাঁরা পুরো বিশ্বকে বোকা ভাবতে শুরু করেছে, এই ভাবনা-ই তাঁদেরকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে একটি ভয়ঙ্কর পরিনতির দিকে। আজ বিশেষ কারণে প্রভা আমার সাথে যোগ দিতে পারেনি,তাই আজকের সমান্তরাল একক ভাবেই চলবে।
২০১৩/১৪ এর আন্দোলনের সময় বর্তমান সরকার বিএনপিকে অনেক অপ্রমানিত দোষে দোষী সাব্যস্ত করে ইউরোপ আমেরিকা এবং বিশ্বের অনেক দেশের সরকারের কাছে অপরাধী বানাতে পেরেছিল, এবং এই চালাকিটা তখন কেউ বুঝতে পারেনি। তাই তখন সবাই বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করেছিল, যেহেতু সরকার অতি চালাক তাই এবারো সেই একই চালাকি করে পার পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত ২৮ তারিখে বিএনপির সমাবেশে যে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে, তা ছিলো অতি চালাকের চালাকি, কিন্তু এবার আর পার পাওয়া যাবেনা।
সরকার সবসময় বলেছে বিএনপি হচ্ছে নালিশ পার্টি তাই তাঁরা বিভিন্ন রাষ্ট্র দূতদের কাছে শুধু নালিশ করে বেরায়। সরকার এসব নালিশকে পাত্তা দেয় না, সরকার প্রধান তো এমন ধমকিও দিয়েছেন প্রয়োজনে আমরাও ইউরোপ আমেরিকাকে স্যাংশান দিয়ে দেবো, অথচ এখন দেখছি বিএনপির বিরুদ্ধে নালিশ করছে সরকার প্রায় পঞ্চাশ দেশের রাষ্ট্রদূতদের দাওয়াত দিয়ে, অবশ্য সেই অতিথিরা তাদের এই চালাকি বুঝতে পেরেছে বলেই শুধু চুপচাপ শুনে গেছে কিন্তু কোন জবাব বা প্রশ্ন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। অবশ্য আমাদের অতি চালাক সরকার ভেবেছে বিশ্ব জয় করা হয়ে গেছে।
এবার বলি কিভাবে বহির্বিশ্বের সবাই তাঁদের দেয়া অসত্য তথ্য গুলো বুঝে ফেলেছে। সরকার কাকের মতো নিজের চোখ বন্ধ করে মনে করে কেউ তাঁকে দেখতে পায়না, তাই তাঁদের ইচ্ছে মতো অযৌক্তিক এবং অবিশ্বাস্য তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে সকলকে বোকা বানাতে চায়। আজকাল এই উন্নত বিশ্বের কাছে কেউ কিছু লুকাতে পারে না। সরকার ভুল তথ্য দেয়ার আগেই সঠিক তথ্য চলে আসে তাঁদের কাছে ভিডিও এবং অডিওর মাধ্যমে। চালাক মানুষ সব বুঝতে পারে কিন্তু অন্যরাও যে তাঁর চালাকিটা বুঝে সেটাই সে বুঝতে পারে না। তাই ঐ ছাত্র শিক্ষকের আলাপের মতো আমিও মনে করি অতি চালাক মানেই গরু।
সরকার চালাক বলেই ইন্টারনেট বন্দ করে দেয় যা-তে কেউ লাইভ প্রচার করতে না পারে, অথচ তাঁরা বুঝতেই পারছে না, ইউরোপ আমেরিকাতে বসেই স্যাটার্লাইট ব্যবহার করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছবিও নিয়ে আসা যায়।
সরকারের উচিত চালাকি নয় বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করা, এবং সমস্যার সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া, না হয় ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাঁরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতে চাচ্ছে, অথচ ধীরে ধীরে মানুষের ভয় কাটতে শুরু করেছে, কারণ পেটের খিদে মানুষকে দুঃসাহসী করে তোলে, আর মানুষ যখন ভয়কে জয় করে ফেলে তখন কোন স্বৈরশাসক আর টিকে থাকতে পারে না।
সরকারের হাতে সময় খুব বেশী নেই, কারণ চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে আর যাই হোক, যুদ্ধ করা যায় না। তাই অতিচালাক না হয়ে বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা করা উচিত বৃহত্তর স্বার্থে।
আগামী সপ্তাহে আবার সমান্তরাল ফিরে আসবে তাঁর পুরনো রুপে, আগামী সপ্তাহে থাকবে নতুন কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য, ততোক্ষণ ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। ৭ম পর্ব, চলবে। আগামী সংখ্যায় চোখ রাখুন। সেলিম মোহাম্মেদ, লন্ডন ইউ কে, ১নভেম্বর ২০২৩.