আজ মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছুইছুই। করোনা ভাইরাসের ছোবলে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণচঞ্চল্য মানুষ। স্বাভাবিক মৃত্যু আমরা মেনে নিতে শিখেছি কিন্তু সকালে জম্পেশ আড্ডায় মুখরিত বন্ধু কিংবা আপনজন বিকেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পাড়ি দিচ্ছে ওপারে। আমরা এই প্যানডেমিকে কেউই নিরাপদ নই।
মুহুর্মুহু মরছে মানুষ, আক্রান্তের সংখ্যা অপ্রত্যাশিত হারে বেড়েই চলছে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে রাস্তাঘাটে মানুষ ও পরিবহনের ঢল। কঠোর লকডাউন কি আমাদের সকলের জন্য নয়! সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ রাস্তাঘাটে মুভমেন্ট করছে কি উদ্দেশ্যে, তা বোধগম্য নয়। সরকার প্রজ্ঞাপন জারীকরে নাগরিকদের ঘরের বাহির না হতে নিরুৎসাহিত করার সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা আমাদেরটাই করে যাচ্ছি। সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে আপনার নিরাপত্তার দায় নিবে কিন্তু স্বেচ্ছায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ঘটলে দায় কেন নিবে! আপনার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে রাষ্ট্র হয়তো একজন নাগরিক হারাবে কিন্তু আপনার পরিবার কতটুকু হারাবে, সেই অনুভূতি তাদের নেই, যারা ব্রেকছাড়া বিনাপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে থেকে সংক্রমিত হচ্ছে এবং পরিবার পরিজনকেও সংক্রমণের ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।
অনেক পরিচিতজনকে দেখছি এই সংকটকালে বিভিন্ন অফিস , কিংবা অন্যান্য স্থানে মাস্কবিহীন জম্পেশ আড্ডায় মশগুল হয়ে ফেবুতে পোস্ট করে বীরের খেতাব নিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। আজরাইল কিন্তু আড্ডাঘর চিনে মামু, যেখানেই থাকো মাফ নেই গোলাম হোসেন। নিজ অসচেতনমূলক চলাফেরার দায়ে যারা অন্যকে সংক্রমিত করছে, তাদের বিষয়ে বলার রুচিবোধ হারিয়ে গিয়েছে। একটি অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মানেই আপনার অভিভাবকের স্থায়ী গগনবিদারী আর্তনাদ ও পরিবারের পঙ্গুত্ব বরন করা। আমিও আড্ডাবাজ কিন্তু পরিস্থিতি অনুধাবনে প্রাকটিক্যাল আড্ডাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে ভার্চুয়াল আড্ডা দিচ্ছি। সরকারের সেবাখাতের আওতায় কর্মসম্পাদন করি বিধায় আমার মুভমেন্ট সংরক্ষিত নয়, তবুও অফিস থেকে বাসা ছাড়া অন্যকোথাও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা।
এখনও সময় আছে অনুধাবন করার। আপনি আপনার নিজকে নিজ আলয়ে সংরক্ষিত রাখুন এবং পরিবারের সদস্যদের কঠোরতার শেকল পরিয়ে দিন। একজন মানুষের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মানেই সারাজীবনের কান্না ও অসহায়ত্বকে বরণ করে নেওয়া। আড্ডা, মাস্তি, রাস্তার মোড়ে হিরোগিরি দেখানোর অপদার্থ ম্যানিয়া থেকে বিরত থেকে নিজে সুরক্ষিত থাকুন ও অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে প্রত্যয়ী হোন। ঘরে অবস্থান করুন, বেচে থাকলে সুদে আসলে এক্টিং করে হিরোর বদলে সুপার হিরো হতে পারবেন। যতই আমরা বুঝিনা কেন, দিনশেষে বেহায়া ও অসভ্যতাকে স্বাগত না জানালে আমাদের অধিকাংশের ষোলকলা পূরণ হয়না। আল্লাহ সকলকে সুরক্ষিত রাখুক।
মোস্তাফিজুর রহমান। গোপালগঞ্জ। তারিখঃ ০৫/০৭/২০২১ ইং।