মোস্তাফিজুর রহমান
বামপাশে প্রদর্শিত ছবিটির বাস্তবতার প্রতি আবরূ প্রদর্শন বারংবার। ছেলেবেলায় ঠিক আমিও এমন বাবার হাতধরে মাঠঘাট চষে বেড়াতাম, আর লাগামহীন চেতনার চাপে সামর্থ্য শব্দটাকে পাশ কাটিয়ে বাবার উপর চাপিয়ে দিতাম অসংখ্য বায়না। সামর্থ্যহীনতার পিঞ্জিরায় বন্দী বাবা সন্তানের বায়না মেটাতে অক্ষম জেনেও হাসিমুখে আশ্বস্ত করতো চাহিদা পূরণ করার প্রত্যয়ে।
ঈদ মৌসুমে নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো অন্যান্য সচল পরিবারের সন্তানদের ন্যায় আমার এবং আমার সহোদরদের একচিলতে প্রানবন্ত হাসিমুখ দেখার মাধ্যমে অবারিত সুখের সাথে সান্নিধ্য স্থাপন। সন্তানের নির্মল হাসিমুখ দেখার জন্যে বাবারাই পারে নিজ অস্তিত্ব সংকট ও সন্মানহানীর কথা ভুলে গিয়ে যাচ্ছেতাই করতে, পারে আমিত্বকে বিসর্জন দিতে। প্রতিটি ঈদ ও উৎসবকে ঘিরে পরিবারের কর্তা হিসেবে এতগুলো সদস্যর নতুন পোষাক ও আনুষঙ্গিক চাহিদা নিশ্চিতকল্পে বাবারা রাতে নির্ঘুম রাত কাটায় উৎসের খোজে, আর সন্তানের নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম হয় শত প্রাপ্তির আশায়। এখন বাবা হয়েছি, খুব করেই অনুধাবন করতে পারি সেই দূরাবস্থাসম্পন্ন দিনগুলোর কথা, যেমনটা এখন আমাকেই করতে হচ্ছে সন্তানের হাসিমুখ দেখার প্রত্যয়ে।
ঈদ ও উৎসবকে ঘিরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনটনের শিকার বাবা ছেড়া পাঞ্জাবি গায়ে পরে ঈদের আনন্দ অনুভব করতো সন্তানের নতুন পোশাকের প্রফুল্লতার হাসিমুখ দেখে। আমি সেই অবুঝ ছোট্ট খোকা, এখন বাবার জন্যে অনেক পোশাক কিনে দেই সেদিনটার কথা ভেবে কিন্তু বাবা এখন বয়সের ভারে রুচিবোধের যুদ্ধে পরাস্ত সৈনিক, কোথাও এমন যাওয়ার প্রয়োজন হয়না , তেমনি পোশাকের প্রয়োজনটাও ফুরিয়ে গিয়েছে। ভুরিভুরি পোশাক পরার অনুভূতি বাবার ক্ষত হৃদয়কে আর উজ্জীবিত করেনা।সন্তানের জন্যে ত্যাগ করতে করতে বাবার রুচিবোধের মাত্রা নিষ্পেষিত হয়ে, সেকেলে হিসেবেই ধরাধাম থেকে বিদায় নেয় বাবারা ! ভোগ উপভোগ যেন বাবাদের জন্যে প্রযোজ্য নয়! সন্তানকে ঈদের নতুন পোশাক পরিয়েই বাবার ঈদ আনন্দ সীমাবদ্ধ হয় হাজার স্বপ্ন অন্তরে লালন করে। পেশা আর সামর্থ্যের প্যারামিটার যাই হোক না কেন, প্রতিটি বাবাই তার সন্তানের নিকট সুপার হিরো।
লেখক:- মোস্তাফিজুর রহমান। গোপালগঞ্জ। ২৯ এপ্রিল ২০২২.